পাহাড় ধস রোধে দরকার সচেতনতা
পাহাড় ধস রোধে দরকার সচেতনতা
পাহাড় অপরূপ সৌন্দর্যের এক নাম। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই পাহাড় পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে। প্রায় প্রতি বছরই পাহাড় ধসে অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। মানুষ বিভিন্ন কারণে প্রকৃতির অমূল্য সমপদ পাহাড়ের বনাঞ্চল উজাড় করে পাহাড় কেটে বসবাসের উপযুক্ত জায়গা তৈরি করছে। ফলে পাহাড়ের উপরিভাগের স্তরগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর অতিবৃষ্টির প্রভাবে সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় ধসের। এতে করে প্রতি বছর পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এমনকী ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
Shikder Mohammad Jakaria - সিকদার মোহাম্মদ জাকারিয়া - Shikder Mohammad Jakaria - সিকদার মোহাম্মদ জাকারিয়া
বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন কাঠামোর বিন্যাসে দেখা যায় যে, আমাদের পাহড়গুলোর উপরিভাগে বালির স্তর দ্বারা গঠিত এবং তার নিচে কাদা-মাটির মিশ্রণের স্তর। এইভাবে অনেকগুলো স্তর নিয়ে পাহাড়গুলো গঠিত। যার ফলে কোনোভাবে যদি পাহাড়ের উপরের স্তরে ক্ষয় হয় তবে অতিবৃষ্টির প্রভাবে নিচের কাদামাটির স্তরে পানি প্রবেশ করে। এতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সাধারণত দুই কারণে পাহাড় ধসের সৃষ্টি হয়। প্রথমত, প্রাকৃতিক কারণ ও দ্বিতীয়ত, মানুষ সৃষ্ট কারণ। প্রাকৃতিক কারণে প্রধানত পাহাড়ের গঠনই পাহাড় ধসের কারণ। যদি এর গঠন হয় এমন যে এর নিম্নভাগে গর্ত থাকে, তবে সেই পাহাড়ের ধসে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
Shikder Mohammad Jakaria - সিকদার মোহাম্মদ জাকারিয়া - Shikder Mohammad Jakaria - সিকদার মোহাম্মদ জাকারিয়া
তাছাড়া ভূমিকমপ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের কারণেও অনেক পাহাড় ধসের সৃষ্টি হয়। যদি পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে নদী বা সাগর প্রবাহিত হয় তবে এর ঢেউয়ের আঘাতের ফলেও পাহাড় ধসের সৃষ্টি হতে পারে। আর মানুষ সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে পাহাড় থেকে মাটি কেটে ফেলা, পাহাড়ের বনাঞ্চল ধ্বংস করাই প্রধান। গাছের মূল মাটির নিচের দিকে প্রসারিত থাকে। এটি মাটি আটকে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু বর্তমানে নির্বিচারে গাছপালা কাটার ফলে মাটি হালকা হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড় ধসের। তাছাড়া পাহাড়ে বসবাসরত মানুষেরা বিভিন্ন শস্য (ঝুম চাষ করে) চাষাবাদ করে। এর জন্য পাহাড়ের উপরের স্তর হালকা হয়ে যায়। চাষাবাদের জন্য অনেক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে যা প্রাকৃতিক গাছপালা সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
Shikder Mohammad Jakaria - সিকদার মোহাম্মদ জাকারিয়া - Shikder Mohammad Jakaria - সিকদার মোহাম্মদ জাকারিয়া
বিগত দশ বছরে অন্তত তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ এই পাহাড় ধস। শুধু ২০১৭ সালেই পাহাড় ধসে প্রায় ১৫৬ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। প্রাকৃতিক সৃষ্ট দুর্যোগ রোধ করা সম্ভব নয়, তবে একটু সচেতন হলেই এর ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। এর জন্য ব্যাপকভাবে জনসচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে। পূর্ব সতর্কতা হিসাবে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ে বসবাস করা মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসাবে মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া পাহাড়ের মাটি ও গাছপালা রক্ষায় কঠোর আইন তৈরি করে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। পাহড়ে বৃহত্তর পরিসরে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে করে পাহাড় ধস কমানো সম্ভব হয়। পুরাতন রিপোর্টগুলোর সাহায্য নিয়ে বা নতুন কমিটি করে তাদের সুপারিশমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে পাহাড় ধস কমনো সম্ভব হবে বলে মনে করি।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বি.দ্রঃ লেখাটি ১৩ জুন, ২০১৮ ইং এ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত।
লেখার লিংকঃ দৈনিক ইত্তেফাক
No comments