Header Ads

Header ADS

আনন্দ ভ্রমণ

 

আনন্দ ভ্রমণ
সাজেক ভ্যালী - Sajek Valley আনন্দ ভ্রমণ
সাজেক ভ্যালী - Sajek Valley 

একটানা কর্মময় দিনগুলোর মাঝে একটু প্রকৃতির ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে কে না চায়! প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটাতেও নিজ উপজেলার বাইরে একত্রিত হওয়ার ইচ্ছা থেকে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা শেষে কচুয়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করে সাজেক ও কক্সবাজার ট্যুরের। যা ৭ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। যাত্রা শুরু করে হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার পরই উল্লাসে ফেটে পড়ে সকলে। গান, নাচ আর আড্ডায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বাস। কুমিল্লার নিকটবর্তী ডলি রিসোর্টে যাত্রাবিরতি নিই। এত লম্বা জার্নি হওয়ায় মাঝপথে কিছুক্ষণ বিরতি নিজেদের চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। এতে কিছুটা ঝিমানির সৃষ্টি করলেও আমরা গা ঝাড়া দিয়ে আবার যাত্রা শুরু করি।

শীতকাল হওয়ায় বাইরে ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন এবং খাগড়াছড়ির রাস্তা হলো উঁচু-নিচু, সরু, আঁকাবাঁকা, কোণাকুণি, পিচঢালা। খানিকটা ভয়ংকরও বটে। ঘুম ঘুম অবস্থা আর এঁকেবেঁকে চলা বাসের ঝাঁকুনি সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি। মধ্যরাত্রি হওয়ায় অন্যান্য ছোটো যান না থাকায় অনেকটা ঝামেলামুক্তভাবেই আমরা পৌঁছাই। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে দেখা মিলবে কাঙ্ক্ষিত মায়াভরা মেঘের রাজ্য সাজেক। তাই বেশ তাড়াহুড়োর সঙ্গে ডিম, পরোটা, সবজি দিয়ে সবাই সকালের নাস্তা সেরে চান্দের গাড়িতে করে ৯টা ৩০মিনিট নাগাদ রওনা দেই সাজেকের উদ্দেশ্যে।

সাজেক ভ্যালী - Sajek Valley আনন্দ ভ্রমণ

সাজেক ভ্যালী - Sajek Valley 

চমত্কার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলে আমাদের পথচলা। মূল সাজেকের রাস্তায় প্রবেশের আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট সেনাক্যাম্পে তথ্য প্রদান করতে হয়। সেখানে বিশাল খোলা মাঠে সকল চান্দের গাড়ি, জীপ, প্রাইভেট গাড়ি রাখা হয়। তথ্য দেওয়া শেষে আমাদের গাড়িটি পাহাড়ি রাস্তা ধরে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়। রাস্তার ধারের কুঠিবাড়িগুলোর বাচ্চাদের হাত নেড়ে আতিথেয়তা বিনিময় করার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তায় চলতে চলতে ছোটোবড়ো পাহাড় ও এর আশেপাশের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের সেই মুহূর্তের অনুভূতি কিভাবে বর্ণনা করব?



স্নিগ্ধ বিকালবেলায় আবারও চান্দের গাড়িতে করে বেরিয়ে গেলাম অপরূপ সাজেকের রূপ দেখতে। গন্তব্য কংলাক পাহাড়ের চূড়া থেকে সাজেককে দেখা। কংলাক পাহাড়ের চূড়া থেকে মনে হবে এমনই মায়াজালে আচ্ছন্ন একটা জায়গা, যেখানে কুয়াশার সাদা আবরণে পাহাড়ি সবুজকে ঢাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। প্রকৃতি আবেগি চাহনিতে আমাদের বলছে : ‘ভ্রমণপিয়াসীরা তোমরা যেও না, তোমরা থেকেই যাও আরো কয়েকটা দিন’। সাজাকের মায়াবী, দৃষ্টিনন্দন, নয়নাভিরাম রূপ-মাধুর্যের সঙ্গে মিশে পাখির মতো ডানা মেলে বারংবার হারিয়ে যেতে চাইবে মন। পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যাস্তের অতুলনীয় দৃশ্যের স্মৃতি ধারণ করতে করতে কিছু ফটো সেশনও করে নিয়ে রিসোর্টের দিকে ফিরে আসি।

রাতের খাবার শেষে সাউন্ড বক্স নিয়ে সবাই ছুটে যাই হেলিপ্যাডে। ঠান্ডা বাতাস আর গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে আড্ডায় মধ্যরাতে সাজেক মুখরিত হয়ে পড়ে আমাদের কচুয়াবাসীর পদচারণায়। স্নিগ্ধ সকাল দেখার ইচ্ছা নিয়ে ঘণ্টাখানেক পর সবাই রিসোর্টে ফিরে যাই। কিন্তু আবারও আড্ডার আসর সাজল। আনন্দ, হইচই, নিজস্ব গলার গানে মুখরিত আর বারান্দায় কুয়াশাচ্ছন্ন শীতল বাতাসের ছোঁয়ার সেই অনুভূতি বলে বোঝাবার মতো নয়। সারা রাতের আমোদ-প্রমোদের পর সামান্য ঘুমোতে গিয়ে অধরাই থেকে গেল সূর্যোদয় দেখা। তবুও সকালবেলার সাজেক দেখার লোভ আটকাতে না পেরে সম্পূর্ণ সাজেক একবার ঘুরে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে রিসোর্ট ছেড়ে সাজেক পানে শেষ দৃষ্টি দিয়ে কক্সবাজারের রূপ দেখার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।

সাজেক ভ্যালী - Sajek Valley আনন্দ ভ্রমণ

সাজেক ভ্যালী - Sajek Valley 

দুপুরের খাবার শেষে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে সকলে বেরিয়ে পড়ে ইনানী, হিমছড়ির দিকে। সেখান থেকে সন্ধ্যার আগেই সুগন্ধায় ফিরে এসে একসঙ্গে সূর্যাস্ত উপভোগ করে সকলে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাত ৯টা নাগাদ বারবিকিউ করে আবারও ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে ব্যস্ততার ডাকে সাড়া দিয়ে কক্সবাজার ত্যাগ করি।



স্মরণীয়, অসাধারণ, রোমাঞ্চকর, প্রাণবন্ত, শিক্ষণীয় এই ভ্রমণ ছিল প্রতীক্ষা আর মেলবন্ধনের সার্থক বোঝাপড়া। এটি সমুদ্রের গর্জন, মেঘ-কুয়াশার আলতো স্পর্শের পরম অনুভূতি ; আনন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, প্রত্যাশা-অপ্রত্যাশা, উত্তেজনা আর উত্ফুল্লতার উষ্ণ প্রতিফলন। যা আমাদের ভ্রাতৃত্বকে বহুগুণ বৃদ্ধি করবে বলে আশা করি।

সাইটেশনঃ 

দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত

তারিখঃ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

No comments

Powered by Blogger.